কক্সবাজার সদরের চৌফলদণ্ডীতে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে। ওই ইউনিয়নের চৌফলদণ্ডী খালের পাড়ের লাল গুদাম, মলইপাড়া ও উত্তরপাড়া এলাকায় বেশিরভাগ শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে।
লাল গুদাম এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী ছৈয়দুর রহমান জানান, শুঁটকি উৎপাদনের সাথে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক জড়িত। তম্মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আবার নারীশ্রমিক। শ্রমের তুলনায় মজুরি পান খুবই কম জানালেন নারী শ্রমিক শেফালী। সারাদিন শরীরের ঘাম ঝরিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে পান মাত্র আড়াইশ থেকে সর্বোচ্চ ৩শ টাকা। এত অল্প টাকায় সংসারের চাকা ঘুরাতে শেফালীর অনেক কষ্ট হয় বলেও জানান তিনি।
অপর নারীশ্রমিক শান্তিবালা জানান, শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত কাজ পেলেও বর্ষাকালে কোন কাজ থাকে না তাদের। এ সময় সংসারের ব্যয় মেটাতে তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার শিকার হতে হয়। কেউ কেউ আবার চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। শুষ্ক মৌসুমে শ্রম বিক্রি করে এসব ঋণের টাকা পরিশোধ করেন তারা। এদিকে উৎপাদিত শুঁটকির বেশিরভাগই পাইকারি বিক্রি করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। জেলার মালুমঘাট, ডুলহাজারা, খুটাখালী, ঈদগাঁও, রামু, পাশ্ববর্তী বান্দরবান জেলার বাইশারী ও চট্টগ্রাম জেলার চাক্তাই থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এসব শুঁটকি পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান বলে জানান ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, চাক্তাইয়ের আড়তদারেরা অনেক সময় ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধে বিলম্ব করেন অথবা এমন অনেকে আছেন পুরো টাকাই মেরে দেন। যে কারণে পুঁজি হারিয়ে এখন অনেকেই নিঃস্ব। চৌফলদণ্ডী এলাকায় উৎপাদিত শুঁটকির মধ্যে রয়েছে লইট্ট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, নাইল্যা, গুইজ্জা, চিংড়ি ও পোয়া। ছুরি প্রকারভেদে ৮শ থেকে ৩শ, ফাইস্যা ২৫০ থেকে ৩শ ও নাইল্যা ১৫০ থেকে দুইশ টাকা দরে বিক্রি করা হয় বলে জানান অপর ব্যবসায়ী হামিদুল হক।
সনাতন পদ্ধতিতে ও নোংরা পরিবেশে শুঁটকি উৎপাদিত হওয়ায় এখানকার শুঁটকিগুলো খুব একটা মানসম্মত নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শ্রমিক জানান, সব শুঁটকিতেই অতিরিক্ত লবণ, বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক ও বিষ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এদিকে সরকারপ্রদত্ত ড্রাই ফিশ এন্ড একুয়া কালচার ফর ওয়েলবিয়িং এন্ড নিউট্রিশন প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ শুঁটকি মাছ উৎপাদনে ফিশ ড্রায়ারগুলোও খালি পড়ে আছে।
স্বাস্থ্য সচেতন সরওয়ার কামাল শাহ জানান, পরিচ্ছন্ন, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ ও রাসায়নিকমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের জন্য এসব ফিশ ড্রায়ার প্রদান করা হলেও সেখানে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা মাছ না শুকিয়ে আগের মতো সনাতন পদ্ধতিতেই মাছ শুকাচ্ছেন। যে কারণে এসব মানহীন ও রাসায়নিকযুক্ত মাছ খেয়ে ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।